ব্রহ্মপুত্রের উপর লাখো মানুষের ঢল। লাখো মানুষের পদচারনায় মুখোরিত চিলমারীর ব্রহ্মপুত্রের ডানতীর। ঈদের আনন্দসহ এলাকার সৌর্ন্দয্য উপভোগ করতে কুড়িগ্রামের চিলমারীসহ আশপাশের উপজেলার ও বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন বিনোদন প্রেমী হাজারো মানুষ ভিড় করছেন চিলমারী ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর রক্ষা প্রকল্পসহ বিভিন্ন বিনোদনের তীর গুলোতে। বিনোদন প্রেমীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো ডানতীর ও নদী এলাকা। শুধু ঈদের দিনটিতেই নয় গত কয়েকদিন থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী ও শিশু-কিশোরসহ সব বয়সেরই বিনোদন প্রেমী দর্শনার্থীদের পদচারণায় ও মিলন মেলায় মুখরিত ও প্রাঞ্জলিত হয়ে উঠেছে ব্রহ্মপুত্র ডানতীর এবং আশপাশের এলাকা।
রমনা ঘাট মাষ্টার লিপু জানান, ঈদের দিন থেকে আজ পর্যন্ত অন্তত কয়েক ল্য বিনোদন প্রেমীর ভিড়ে পুরো ডানতীর এলাকা মুখরিত হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন এই এলাকায় বিভিন্ন জেলা উপজেলার হাজার হাজার দর্শনার্থীদের পদভারে এর আশে পাশের এলাকাও মুখরিত। ডনতীর রক্ষা প্রকল্প উপজেলার চিত্র বদলে দিয়েছে আর ফিরে আসতে শুরু করেছে সেই চিলমারীর বন্দরের ঐতিহ্য। ক্রমেই পরিচিতি লাভ করছে ব্রহ্মপুত্রের বিনোদন পার্ক হিসেবে। আগত দর্শনার্থী ও ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য গড়ে উঠেছে ভাসমান কয়েকটি দোকান। উপজেলার সকল স্তরের মানুষসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের মতে, ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীরে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পাবলিক টয়লেট, যাত্রী ছাউনি নির্মাণসহ বিভিন্ন বিষয়ে পদপে নেওয়া প্রয়োজন। নিরাপত্তাজনিত কারণে দূর থেকে আসা লোকজন কিছুটা সমস্যা মনে করলেও হাজার হাজার দর্শনার্থীর আগমনে আশেপাশের এলাকায় উপচে পড়া ভিড় ল্য করা গেছে। দর্শনার্থীরা ডানতীর এলাকায় একটি পার্কসহ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানন। এব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ শওকত আলী সরকার বীর বিক্রম জানান, চিলমারী উপজেলা বৃটিশ আমল থেকে নানা কারণে গুরত্বপূর্ণ। সে সময় গড়ে ওঠে নদীবন্দর। মারওয়ারি ব্যবসায়ীরা এ নদীবন্দর হয়ে তাদের পণ্য আনা-নেয়া করতেন। এখানে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠলে আবারও প্রাণ ফিরে পাবে বন্দর এবং সরকারও এ এলাকা থেকে আয় করতে পারবে। সাবেক এমপি গোলাম হাবিব দুলাল বলেন, চিলমারী বন্দরের ঐতিহ্য বহু প্রাচীন। বৃটিশ ভারতে ব্রক্ষ্মপুত্র নদ বেয়ে কোলকাতা হ‘তে পন্য ও যাত্রীবাহী জাহাজ সমূহ চিলমারী অতিক্রম করে অবিভক্ত আসামের নদী বন্দরে গিয়ে পৌঁছাত, চিলমারী বন্দর ছিল ঐ সমস্ত জাহাজের চেকিং বন্দর। বিখ্যাত পল্লী সংগীতের স¤্রাট আব্বাছ উদ্দিন চিলমারীকে তার গানের মাধ্যমে পূর্ব ও পশ্চিম বঙ্গে চিলমারী নামটিকে পরিচিত করে গেছেন। বর্তমানে চিলমারীতে ব্রক্ষ্মপুত্রের বিস্তৃতি ১২/১৫ কি.মিটার। বর্ষায় সর্বত্র এই নদ একাকার হয়ে যায়, পানিতে ছয়লাব হয়ে। কিন্তু শুষ্ক মৌস্যুমে ব্রক্ষ্মপুত্র নদ অজ¯্র ধারা হয়ে অসংখ্য চর ও দ্বীপ তৈরী করে প্রবাহিত হয়। এই সমস্ত চর ও দ্বীপ দেখতে নয়নাভিরাম বটে। চর ও দ্বীপ গুলি কাশ ফুলে ছেয়ে যায় এবং দীগন্তে বিস্তৃতি লাভ করে। এই সমস্ত চরাঞ্চল গুলি ও ব্রক্ষ্মপুত্র নদ মিলে পর্যটকদের আকর্ষন করে। বিভিন্ন এলাকার লোকেরা এই দৃশ্য দেখতে এবং নৌকাভ্রমন করতে এখানে আগমন করে থাকে। ব্রক্ষ্মপুত্র নদের বুকে অজ¯্র দ্বীপ ও চরের যে সমাহার আছে তা অতি বিরল, অন্যত্র এরূপ দেখা যায় না, আর এর বিস্তৃতি বহু মাইল ব্যাপী। জানা যায় এখানকার বালুরাশির মধ্যে মূল্যবান পদার্থ আছে, যা বানিজ্যিক ভাবে আহরন যোগ্য। শীতে ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখী এই এলাকাকে প্রাকৃতিক ভাবে অতুলনীয় করে তোলে। জেলেরা দলে দলে মৎস্য শিকারে ব্যস্ত থাকে, ভ্রমন পিপাসুদের জন্য তা বাড়তি আনন্দ দেয়। অত্র এলাকার মানুষের চিত্ত বিনোদনের অন্য ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের ভীড় বেড়ে যায় শুষ্ক মৌস্যুমেও। পর্যটন বিভাগ এই এলাকায় ভ্রমন পিয়াসুদের জন্য অতি সহজেই ব্যাবস্থা গড়ে তুলতে পারে। চিলমারীকে একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুল্লে ভ্রমন পিয়াসু অসংখ্য নর-নারী, কিশোর তরুন তরুনিরা চিত্ত বিনোদনের সুযোগ লাভ করবে। চিলমারীকে একটি  Eco-Park হিসাবে গড়ে তোলার জন্য পর্যটন বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

-মোঃ সাওরাত হোসেন সেহেল